রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় উন্নতি, বেশিরভাগ জেলায় অবনতি

রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় উন্নতি, বেশিরভাগ জেলায় অবনতি

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় করোনায় মৃত্যু এবং আক্রান্তের ভয়াবহ রূপ নেই। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়তে থাকে প্রতিদিন। তবে গত কয়েকদিন থেকে বিভাগীয় শহর রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলায় করোনার সার্বিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও পরিস্থিতি এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। গতকালও রাজশাহীতে মারা গেছেন ১৬ জন এবং সাতক্ষীরায় ৮ জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় বেশিরভাগ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১০৮ জন মারা গেছেন। এ সময়ে শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৫৯ জন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সাতক্ষীরা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে জেলায় মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত ও বাকি ৭ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৬৪ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৩০৪ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষা শেষে ৪৮ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

রাজশাহী ব্যুরো জানায় ৩০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে করোনা শনাক্তের হার। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার ৩০ থেকে ৫০-এর ঘরে ছিল, যা বেড়ে সর্বোচ্চ ৬১ শতাংশের ওপরে ওঠে। তিন সপ্তাহের চলমান লকডাউনের মধ্যে গত পাঁচ দিন থেকে কমতে শুরু করে।

ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুটি ল্যাবে রাজশাহীর ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করে ১১৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা আগের দিনের চেয়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ কম। আর আগের দিন ছিল ৩৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এদিন আরও ১৬ জন মারা গেছেন।

ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আশঙ্কাজনক হারে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ময়মনসিংহ মহানগরীর ১১টি এলাকায় জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার (২৫ জুন) সকাল ছয়টা থেকে আগামী ১ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ চলবে। বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিধিনিষেধের আওতাধীন এলাকাগুলো হচ্ছে- নগরীর মাসকান্দা (বাসস্ট্যান্ড), চরপাড়া, নয়াপাড়া, কৃষ্টপুর, আলিয়া মাদ্রাসা, নওমহল, আর কে মিশন রোড, বাউন্ডারি রোড, পাটগুদাম, কাঁচিঝুলি ও গাঙিনারপাড় এলাকা। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব এলাকার সার্বিক কার‌্যাবলি/চলাচল (জনসাধারণের চলাচলসহ) বন্ধ ঘোষণা করা হলো। পুলিশ সূত্র জানায়, শহরের পাটগুদাম বাসস্ট্যান্ড ও মাসকান্দা বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস চলাচল করবে না। এ ছাড়া লকডাউন এলাকায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করে পুলিশ।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. মো. শাহ আলম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের চার জেলায় মোট ৯৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, এর মধ্যে আক্রান্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ১৬৫ জন। বিভাগে আক্রান্তের হার ১৭.১৫ শতাংশ।

কুষ্টিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জেলায় করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। সিভিল সার্জন আনোয়ারুল ইসলাম জানান, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ২৬৪ জনের পরীক্ষায় ১১১ জনের পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ৪২ শতাংশ। এর আগে ১৯ জুন জেলায় রেকর্ড আটজনের মৃত্যু হয়। জেলায় মোট মৃত্যু ১৭৩ জনের। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার জানান, করোনা ভাইরাস ইউনিটে ১০০ বেডের বিপরীতে এখন ১৭২ জন রোগী রয়েছেন। রোগীর চাপ সামলাতে ২০০ বেডে উন্নীত করার কাজ চলছে। এ মুহূর্তে হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে।

বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, সংক্রমণের হার প্রতিদিনই ওঠানামা করছে। কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েও সংক্রমণের লাগাম টেনে রাখা যাচ্ছে না। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির জানান, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭২ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৪৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মোংলা উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২০ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সেখানে সংক্রমণের হার ৬৪ দশমিক ৫১ শতাংশ; আগের ২৪ ঘণ্টায় এই হার ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ছিল বলে জানান হুমায়ুন কবির।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, চলমান বিশেষ বিধিনিষেধের মধ্যেই জেলায় বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১২৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ নিয়ে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা চার হাজার ছাড়াল। ২৪ ঘণ্টায় জেলায় দুজন মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১৬ জন শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ। এ সময় সদর হাসপাতাল সংলগ্ন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ও সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফাতেহ আকরাম জানান, সাতজনের মধ্যে একজন করোনায় এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে ছয়জন মারা গেছেন। তিনি আর বলেন, জেলায় এ পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষায় একদিনে এটিই সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনা।

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও পাঁচজন মারা গেছেন। একই সময়ে ১৩১ জন শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার প্রায় ৫৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। জেলায় কয়েক দিন ধরে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ফরিদপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুজন করোনায় এবং অপর তিনজন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় ২১১ জন মারা গেছেন।

রংপুর সংবাদদাতা জানান, বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জন মারা গেছেন। এই সময় ৩৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ৭৩। গতকাল শুক্রবার রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবু মো. জাকিরুল ইসলামের পাঠানো প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ৮০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, দিন দিন বেড়ে চলেছে ভাইরাসের প্রকোপ। জেলায় নতুন করে আরও ১১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে জেলায় করোনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। গতকাল সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, বিধিনিষেধ না মানার কারণে দিনাজপুরে আক্রান্তের সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যু। দিনাজপুর সদর উপজেলায় দ্বিতীয় দফার লকডাউন কার্যকর করতে ও কঠোরভাবে পালনে কাজ করছে জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৫ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। এই সময়ে হাকিমপুরে একজন এবং সদরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৬০ জনের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে ১ জন ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৪৯২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্য ৬ হাজার ৮৪৫ জন ও মোট মৃত্যু ১০৬ জন। বিষয়টি টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাব উদ্দিন খান নিশ্চিত করেছেন।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯৬০ জন। জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন মারা গেছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877